
আসলে এই ডার্ক ফ্যান্টাসি লেখাটা এখন প্রায় বর্তমানে উঠেই গেছে। তবে বর্তমানের বিশিষ্ট কিছু লেখক লেখিকা এখনো এই ধারাকে অব্যাহত রেখেছেন এবং অসাধারণ ভাবে তা করে চলেছেন। তাঁর মধ্যে অন্যতম আমার প্রিয় লেখিকা সাগরিকা রায়। তাঁর এই বই বহুদিন বাজারে ছিলোনা। কারণ বইটির এটি চতুর্থ মূদ্রণ চলছে। আমি সুযোগ পেতেই সংগ্রহ করে রেখেছিলাম। কিন্তু এত কাজের মাঝে পড়া হয়ে উঠছিল না। কারণ আমি জানতাম একবার ধরলে পুরোটা শেষ না করে থামতে পারবো না, কারণ, আমার, সাহিত্যের সবথেকে প্রিয় ধারার মধ্যে অন্যতম এই ডার্ক ফ্যান্টাসি। তাই একদম চাপমুক্ত ফাঁকা মাথায় বইটা নিয়ে বসতে হবে তবেই আনন্দটা পুরো মাত্রায় উপভোগ্য হবে। যা কথা সেই কাজ। সেমিস্টার শেষ করেই মাথা একটু চাপমুক্ত করে কাল রাতেই শেষ করে ফেললাম সেই বইটা।
আর প্যান্ডোরার বাক্সের থেকে যা প্রত্যাশা ছিলো তার থেকেও ১০ গুন এগিয়ে গিয়ে লেখাগুলো আনন্দ দিলো। না আমি মোটেও বাড়িয়ে বলিনি। কারণ এই বই সাগরিকা রায়ের অনেক আগের লেখা। সাগরিকা ম্যামের এখনকার লেখার ধরণ আর এই লেখার ধরণের পার্থক্য আছে অনেকটা। তাই যেহেতু প্রথমের দিকে লেখা ভেবেছিলাম হয়তো একটু হলেও খামতি থাকবে। কিন্তু তার পরিবর্তে সম্পূর্ণ উল্টো দিকে হেঁটে একটা অসাধারণ অনুভূতি দিলো বইটা। ১২ টি লেখা যেন ১২ টি অধ্যায়ের ১২ স্বাদের প্রকাশ ঘটালো। একই ধারার গল্পের ১২ টি স্বাদ তৈরি করা খুব কঠিন কাজ। কিন্তু সেই কাজটি কে অবলীলায় করে দেখিয়েছেন লেখিকা সাগরিকা রায়।
এবার বলি কিছু গল্প কথা। ১২ টি গল্প হল- # জমে থাকা জল, # হরেক মালের দোকান, # মিসেস কণা দত্ত, # ব্যাগ হাতে সেই মহিলাটি, # জাম্পকাট, # গবেষনা, # সময় কত আর, # ঠিক পনেরো পা, # মাছ, # দশটি মার্বেল গুলি, # ব্লু শার্ট, # প্যান্ডোরার বাক্স।
এবার খুব প্রিয় কিছু গল্পের কথা ছোট্ট করে বলি।
# জমে থাকা জল- একদম প্রথম গল্প, প্রথমেই একটা ধাক্কা দিয়েছে আমাকে। আমি ভাবতেও পারিনি এমন একটা ঘটনার বাঁক বদল এইভাবে হবে। রিতিমত চমকে গেছিলাম শেষ দৃশ্যপটে। হাত পায়ের অবস্থান দেখে নিতে হয়েছিলো গল্পের শেষে। এই ভয় পেয়েই বইটা পড়ার নেশাটা আরও চড়ে বসলো যেন।
# হরেক মালের দোকান- হরেক মাল মানে সেখানে হীরে থেকে জিরে সব পাওয়া যাবে। আর সত্যিই যদি এমন দোকান হয়। ” আয়ু ” কি কিনতে পাওয়া যায়?? দেখুন গল্পটা পড়ে। এই ভাবেও কেউ ডার্ক ফ্যান্টাসি ভাবতে পারেন, এটা দেখেই আমি অবাক হয়ে গেছিলাম। অসাধারণ একটা লেখা। বলার ভাষা নেই।
# মিসেস কণা দত্ত – একটা প্রবাদ আছে ‘ আগে এলে সোনা পায়, পরে এলে বাঘে খায়’ এটা কতটা সত্যি বলুন তো? নাকি পুরোটাই কল্পনা? দেখা যাক গল্পের মধ্যে। এটিও একটা সাধারণে অসাধারণ লেখা। প্রথম থেকেই রহস্যময় পরে গিয়ে অপ্রত্যাশিত।
# ব্যাগ হাতে সেই মহিলাটি – এই গল্পটা পড়ার পর থেকে ভারী ব্যাগ হাতে কোনো মহিলাকে দেখলে সাবধানে হাঁটাচলা করতে হবে। বেশ অদ্ভুত ভাবে শেষ হয়েছে গল্পটা।
# জাম্পকাট- এই গল্পের সব টুইস্ট শেষ লাইনে। প্রথম থেকে একটা সাধারণ থ্রিলার। কিন্তু শেষ লাইনটা নাড়িয়ে দেবে। একদম হীম শীতল একটা রক্তের চোরা স্রোত পুরো শরীরকে গিলে ফেলতে চাইবে।
# সময় কত আর- এই গল্পের ভিত্তি কিছুটা আঁটোসাঁটো। ডার্ক হয়েও যেন আর একটু বেশি। মৃত্যু গন্ধের থেকেও ভয়ানক এক গন্ধ ছড়িয়ে আছে এই গল্পে। পড়ে মনের মধ্যে একটা একটা তীব্র ঘৃণা তৈরি হয়েছে চরিত্রটার প্রতি। কেন জানিনা, তাও বারবার পড়তে ইচ্ছে করছে লেখাটা।
# ঠিক পনেরো পা – কি আছে পনেরো পা দূরে? ঠিক একটা শান্ত মাথায় নির্মম দৃশ্যপট নির্মান হয়তো একেই বলে। এতটা ভয়ানক হলে তবে এইরকম পরিস্থিতি তৈরি করা যায়।
# মাছ- এই গল্পটা নিয়ে একটাও কথা বলবো না। শুধু বলবো পড়ুন। আর ওই গোল্ড ফিসটার জন্য অপেক্ষা করুন। এত ভালো লাগবে যে পড়ার পর নিজের মধ্যে একটা আলাদা শান্তি অনুভব করবেন।
এবং সব শেষে বলতে চাই
# প্যান্ডোরার বাক্স- এক কথায় অনবদ্য। লেখাটার একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। আর ওই প্যান্ডোরার বাক্স খোলার দৃশ্যপট আমি চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি। এক অদ্ভুত অনুভূতি। যা বলে বোঝানো যায় না। লোভ, মিথ্যা, হিংসা, দ্বেষ…. সবকিছু যেন এক একটা মানুষকে চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলেছে।
সব মিলিয়ে মিশিয়ে এই বই আমার কাছে একটা হঠাৎ করে পাওয়া প্যান্ডোরার বাক্স হয়ে উঠেছে। যা মনকে আনন্দ দিয়েছে, ভয় দিয়েছে, শান্তি দিয়েছে, অমোঘ আকর্ষণ তৈরি করেছে।